DASCOH works with the Local Government to improve the governance and transform them into agencies that do not necessarily provide services directly but ensure their availability through involvement of state and non-state actors.

Get UPdate

Home Stories

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী পদ্ম রানী

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী পদ্ম রানী

গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা পদ্ম রানী। পিতা শ্রী অর্জুন মন্ডল। ০২ ভাই ০৩ বোনের মধ্যে পদ্ম রানী সবার বড়। বাবা পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। দিনমজুরি করে পরিবারের মোট ৭ জন সদস্যর ভরনপোষন ঠিকমত চালাতে পারতো না। বাবার অন্য কোন আয়ের উৎসও ছিল না। তাই বেশ টানাপোড়ানের মধ্য দিয়ে দিন পার করছিলো পদ্ম রানীর বাবা। তবুও মনের প্রবল ইচ্ছা নিয়ে স্কুলে ভর্তি করান মেয়েকে। অনেক অভাব অনটনের মাঝেও পঞ্চম শ্রেণি পাশ করিয়ে গোমস্তাপুর আ: হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করান। অভাবের সংসারে পরিবার চালানো এবং মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে না পারায় ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৪ বছর বয়সে পাশের গ্রামের অসীম কুমার কর্মকারের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।

শুরু হয় সংসার জীবন। স্বামী কর্মকারের কাজ করে কোন রকম সংসার চালাতো। সংসার জীবনের ৩ বছরের মাথায় তাদের কোল জুড়ে আসে ১ম সন্তান। সংসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার করার মন স্থির করেন। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসেবে মুড়ির ব্যবসা শুরু করেন। মুড়ির ব্যবসা চলতে চলতে ব্যবসার পিরিধ বাড়ানোর জন্য নিজের ৫০,০০০/- টাকা এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে আমের ব্যবসা শুরু করেন স্বামী। দুই বছর আমের ব্যবসা ভালোই চলে কিন্তু ৩য় বছরে ব্যবসাটি কাঁচামালের হওয়ায় ব্যাপক লোকসান হয়। এমন লোকসান হয় যে, সমস্ত মুলধন হারিয়ে ফেলে এর ফলে একবারে নি:স্ব হয়ে যায় এবং ঋণের বোঝা মাথায় চাপে। এই ঋণ সময়মত পরিশোধ করতে না পারায় তার স্বামীর উপর মামলা হয়। মামলার ভয়ে তার স্বামী স্ত্রী সন্তান রেখে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যায়। ছোট সন্তানদের নিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় পদ্ম রানী।

অবশেষে সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যায় সন্তানদের নিয়ে। কিন্তু বাবার অভাবের সংসারে সেখানেও অশান্তি। খেয়ে না খেয়ে বাবার বাড়িতে দুই বছর পার করেন তিনি। স্বামী কোন টাকা পয়সা দিতে পারে না সংসারে।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ডাসকো ফাউন্ডেশন এর টেকসই প্রকল্প থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ অতি দরিদ্র মানুষদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য দুর্লভপুর গ্রামে দল গঠন করে। পদ্ম রানী সে দলের সদস্য হয়। ডাসকো ফাউন্ডেশন থেকে ১২,৮১৪/- টাকার ৩ টি ছাগল প্রদান করে। তিনি তা লালন পালন করতে থাকে। আর স্বপ্ন দেখতে থাকে কষ্টের সেই দিনগুলি পার করে সুখের সন্ধান পাওয়ার।

২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩ টি ছাগল থেকে ২ দুটি বিক্রি করে ২৪,০০০/- টাকা পান। এ টাকা দিয়ে তিনি মুড়ির/খই/নাড়ুর ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসা তার ভালোই চলতে থাকে এবং লাভও ভালো হয়। লাভের টাকা দিয়ে সংসার চালান এবং ছেলের লেখাপড়া চালান। অক্টোবর মাসে দুর্গাপুজার মেলায় দোকান দেয় পদ্ম। নিজ হাতে বাড়িতে মুড়ি/খই/নাড়ু/মুড়কি তৈরী করে মেলায় বিক্রি করেন। মেলাতে প্রায় ১,০০,০০০/- টাকা লাভ হয়। তিনি এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি। তিনি এ ব্যবসাকে আরো বড় করে আরো কিছু লোকের কর্মসংস্থান করতে চান এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে মনোনীত করার কারণসমূহ:

১) পিতার ০৫ সন্তানের মধ্যে ১ম সন্তান তিনি। দরিদ্র পরিবারে খুব কষ্ট করেছেন। দারিদ্রতার কারণে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় ফলে লেখা-পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতেও সুখ পাননি তিনি। জীবনের সাথে সংগ্রাম করে নিজ প্রচেষ্টায় এখন তিনি একজন সফল নারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন এবং সন্তানদের লেখা-পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।